রাসুল (সঃ) বলেছেন, মদিনায় মহামারী প্রবেশ করতে পারবে না।কিন্তু করোনা প্রবেশ করলো কেন? সঠিক ব্যাখ্যা



প্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোনেরা! 
আজকে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মাসআলা নিয়ে আলোচনা করব।

  • আমরা একটি হাদিস ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি এবং এখনো শুনি তা হচ্ছে মক্কা-মদিনায় কখনো মহামারী প্রবেশ করবে না। এটা আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এর একটি সহিহ হাদিস।এখন প্রশ্ন হল, আমরা জানি বর্তমান সময়ে মক্কাতে অসংখ্য মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গেছে।এমনকি মদিনাতেও একজন করোনা ভাইরাসের রোগী মারা গিয়েছেন এবং বেশ কয়েকজন আক্রান্ত হয়েছেন।এক্ষেত্রে প্রশ্ন হল! তাহলে আল্লাহর রাসূল এর হাদিসের ব্যাখ্যায় কি ভুল ছিল?(নাউজুবিল্লাহ)।কখনোই ভুল ছিল না।প্রিয় পাঠক!এখানে আমাদের জ্ঞানের  ত্রুটি ছিল, বুঝার ভুল ছিল।তাই হয়তো আমরা বুঝতে পারিনি।

প্রিয় পাঠক! আজকে আমরা আলোচনা করব এই হাদিসের সঠিক ব্যাখ্যা! 
যেখানে তিনি বলেছেন, মহামারী মক্কা এবং মদীনায় প্রবেশ করতে পারবে না। অথচ বর্তমানে মহামারীতে অসংখ্য মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এমনকি মানুষ মারাও যাচ্ছে।সুপ্রিয় পাঠক! আমরা এই মাসআলাটি কে একটু ক্লিয়ার করতে চাই।নিঃসন্দেহে এটা সত্য যে,আল্লাহর রাসূল (সাঃ)সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন যে,সহীহ বুখারী ও মুসলিমে এসেছেঃ "মদিনার সকল অলিগলি বা মোড়গুলোতে ফেরেশতারা রয়েছে, সেখানে তা'য়ুন এবং দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না"।এখানে আরবি তা'য়ুন শব্দের অর্থ মহামারী বুঝানো হয়েছে।অর্থাৎ, রাসূল (সাঃ) বলেছেন মদিনাতে তা'য়ুন এবং দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না।আমাদের দেশে অধিকাংশ হাদিসের কিতাব গুলোতে এ-ই তা'য়ুন শব্দের একটা বাংলা অর্থ বলা হয়েছে মহামারী।কিন্তু এটি পরিপূর্ণ বাংলা অর্থ নয়।তা'য়ুনের পরিপূর্ণ বাংলা অর্থ ঘাঁটতে হলে আপনাদেরকে আরাবিক ডিকশনারীগুলো দেখতে হবে। পৃথিবীতে রচিত সর্বশ্রেষ্ঠ আরাবিক প্রত্যেকটি ডিকশনারিতে তা'য়ুনের সঠিক অর্থ হল,এটি শুধুমাত্র একটি মহামারী নয়।এটি একটি বিশেষ মহামারী কে বুঝানো হয়েছে।যা তৎকালীন মক্কাতে ঘটতো এবং সেই মহামারী উট এবং মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছিল।রাসূল (সাঃ) বলেছেন  ওই একটি বিশেষ মহামারী এবং দাজ্জাল কখনোই মদীনায় প্রবেশ করতে পারবে না।এমনকি বুঝিয়েছিলেন ওই হাদিসে একই বর্ণনা মক্কার ক্ষেত্রেও রয়েছে অন্য হাদিসে। এখন কথা হল এই তা'য়ুন  বলতে আল্লাহর রাসূল (সঃ) কি বুঝিয়েছেন।তা'য়ুন বলতে কি আম ভাবে সকল মহামারীকেই বুঝিয়েছেন? তা কিন্তু নয়। তা'য়ুনের সঠিক বক্তব্য আপনারা আরবি ডিকশনারি থেকে খুঁজে নিবেন।সেখানে এর সঠিক বক্তব্য হচ্ছে একটি বিশেষ মহামারী।এখন বলতে পারেন,তাহলে তা'য়ুনের অর্থ কি? বা মহামারীর আরবি কি?
আম ভাবে যে মহামারী কে বুঝানো হয় এর আরবি শব্দ হচ্ছে আল-ওয়াবা।যেকোনো ধরনের মহামারী কে বুঝাতে এরাবিকরা ওয়াবা শব্দটি ব্যবহার করে। ইমাম ইবনুল কাইয়ুম (রাহিমাহুল্লাহ) খুব সুন্দর করে একটি কথা বলেছেন।তিনি বলেছেনঃঅর্থাৎ, "প্রত্যেকটি তা'য়ুন মহামারীর অন্তর্ভুক্ত কিন্তু সকল ধরনের ওয়াবা তা'য়ুন নয়"।অর্থাৎ আল্লাহর রাসূল (সাঃ) ওই হাদীসটিতে যে মহামারী বুঝিয়েছেন সেটি একটি বিশেষ মহামারী।এবং তা'য়ুন যে রোগ সেটিও একটি মহামারী।উঠের পালের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে অসংখ্য মানুষের মধ্যে সেটা ছড়িয়ে পড়ত এবং মুহুর্তের মধ্যে শত শত মানুষের মৃত্যুর কারণ হত।তো সেটিও মহামারী ছিল কিন্তু একটি বিশেষ মহামারী।তাহলে সেটিকেও আমরা আম ভাবে ওয়াবা বা মহামারী বলতে পারি কিন্তু সকল প্রকার মহামারীকে তা'য়ুন বলা যাবে না।তা'য়ুন শুধু সেই মহামারী যেটি উঠের পাল এবং মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ত।সুতরাং,আমরা বলতে পারি তা'য়ুন হচ্ছে মহামারীর একটি ধরন।যেটা মহামারীর অন্তর্ভুক্ত কিন্তু যেকোনো ধরনের মহামারীকে তা'য়ুন বলা যায়না।যেমনঃ বর্তমানে পৃথিবীতে করোনা ভাইরাস নামে যে মহামারী রয়েছে এটিও মহামারীর একটি ধরন।সুতরাং,
যারা আমাদের দেশে এই তা'য়ুনকে আমভাবে মহামারি বলেছেন তখন মহামারীর অন্তর্ভুক্ত যাবতীয় ভাইরাস মহামারী, কলেরা মহামারী, ডেঙ্গু মহামারী সহ এখানে সকল প্রকার মহামারী চলে এসেছে।এখানে মুলত  ক্ষুদ্র একটা ত্রুটির কারণেই এই সমস্যাটা হয়েছে। আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এর বিশেষ একটা অর্থকে বুঝিয়েছিলেন কিন্তু আমরা এটাকে আম ভাবে  অর্থ করেছি মহামারী।হযরত আয়েশা(রাঃ) একদিন রাসূল (সাঃ)কে জিজ্ঞেস করেছিলেন,তা'য়ুনটা আসলে কি ইয়ারাসুলাল্লাহ? 
আমরাতো মহামারী বলছে ওয়াবা বুঝি। তখন রাসূল (সাঃ) বলেন, অর্থাৎ "এটা হচ্ছে উঠের শরীরের ন্যায় মানুষের দেহে বিভিন্ন রকমের ফুলে ওঠা গোস্ত। অনুরূপভাবে তার পেটে ও শরীরের নিচের অংশে অথবা শরীরের যে কোন জায়গায় এই রোগটি হতে পারে"।তখনকার সময় আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এই রোগটির যে বর্ণনা দিয়েছিলেন এটি দ্বারা এখানে স্পষ্ট হয়ে যায়,মুলত তা'য়ুন বলতে এখানে কি বুঝানো হয়েছে। কারণ হযরত আয়েশা প্রশ্ন করে পুরো জাতির কাছে বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, এখানে তা'য়ুন বলতে আম ভাবে সকল মহামারীকে বুঝানো হয়নি।মূলত সেই মহামারীকেই বুঝানো হয়েছে যা শরীরের বিভিন্ন অংশে ফোড়ার মত সৃষ্টি হয়।শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লাল বা কালো রঙের ফুলে ওঠা রোগটি  তখনকার আরবদের মধ্যে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল।এই রোগটি যখন হয় তখন মানুষ খুব তাড়াতাড়ি মৃত্যুবরণ করে।মূলত এই ধরনের রোগকেই হাদিসে তা'য়ুন বলা হয়েছে।কিন্তু সকল ধরনের মহামারীকে তা'য়ুন বলা হয়নি।এখানে আল্লাহর রাসূল(সাঃ)  যদি তা'য়ুন না বলে ওয়াবা বলতেন তাহলে আমরা করোনা ভাইরাস থেকে শুরু করে সকল ধরনের মহামারীকেই মনে করতাম।ওয়াবা না বলে তা'য়ুন বলেছেন যেহেতু তাই একটি বিশেষ মহামারীকেই বুঝানো হয়েছে। আল্লাহর রাসূল(সাঃ) এর বাণী চিরন্তন সত্য।কখনো রাসূল (সাঃ)এর বাণীর সাথে জাগতিক সংকট বা সংঘর্ষ সৃষ্টি হবে না।রাসূল(সাঃ) যা বলেছিলেন তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের তরফ থেকে জেনেশুনেই বলেছিলেন।তিনি কখনো নিজ থেকে কোন কিছুই বলেননি।তাঁর পক্ষে মহান আল্লাহ তা'আলাই পবিত্র কুরআনে স্বীকৃতি দিয়েছেন। অনেক সময় আমরা আরবি শব্দের সঠিক বাংলা অর্থ না পেয়ে অনেক বিভ্রান্তিতে পড়ি,ভুলভাল বুঝি।এভাবে আমরা অনেক সময় অনেক আয়াত ও হাদিসের ভুল ব্যাখ্যা জেনে থাকি শুধুমাত্র সঠিক অনুবাদ না হওয়ার কারণে।আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের প্রত্যেককেই ক্ষমা করুক।যারা আমরা এই আরবি শব্দটির সঠিক অর্থ বুঝতে ব্যর্থ হয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ যে,এখন আমরা সঠিক অর্থটি বুঝতে পারছি।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে কোরআন এবং হাদিস বুঝার, তা অনুধাবন করার এবং তা ব্যক্তিগত জীবনে মানার তৌফিক দান করুন। আমিন! 


           thank you so much
                  see you very soon...

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ